মেডিকেলের বইসমূহ
দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতায় আমার মনে হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান অতি জীবনধর্মী, বাস্তবমুখী ও সাধারণ মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি বিজ্ঞান। রোগীর মুখের প্রতিটি ভাষা, ভাব-ভঙ্গী, রোগীর কৃষ্টি-কালচার, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, চলা-ফেরা, জীবনবোধ ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই এই বিজ্ঞান। মানুষের শরীর ও মন নিয়ে কাজ করে এই বিজ্ঞান। কোন একজন মানুষকে ভালভাবে বুঝতে হলে তাকে ভালবাসতে হবে এবং সেই ভালবাসা ও মনের ভাবের আদান-প্রদান নিজ ভাষা ছাড়া সম্ভব নয়। নিজ ভাষা দিয়ে নিজেকে ও অন্যকে সঠিকভাবে অনুভব করা যায় – এই চিন্তা শিক্ষক জীবনের শুরু থেকে আমার মাথায় কাজ করতো।
কিন্তু শিক্ষক জীবনের শেষের দিকে এসে আরও একটা জিনিস চোখে পড়ল। তা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাষায় অদক্ষতা। পড়াতে গিয়ে ও খাতা দেখতে গিয়ে ইংরেজী পঠন ও লিখনে তাদের দুর্বলতা প্রতিভাত হতে লাগল। আমাদের ছাত্রজীবনে আমরা ইংরেজীতে দক্ষ ছিলাম এবং উল্লেখযোগ্য নম্বর পেতাম। তখন জিপিএ-৫ স্কোরিং পদ্ধতি ছিলনা। কিন্তু এখনকার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মাঝে ইংরেজীতে তেমন দক্ষতা পরিলক্ষিত হয় না। সব শিক্ষকেরাই এটা টের পাচ্ছেন।
এই ধরণের শিক্ষার্থীদের ইংলিশ মিডিয়ামে মেডিসিন টেক্সট বই ও রোগ নির্ণয় পদ্ধতি পড়ে তা আয়ত্বে নিয়ে আসা এবং রোগীর উপর প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে অহেতুক বাড়তি ভাষাগত চাপ পড়ছে এবং অনেকক্ষেত্রে পাঠ বুঝতে না পেরে উল্টো বোঝার ঘটনাও ঘটছে। তাই শিক্ষক হিসেবে ইংরেজী মাধ্যমের মূল বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যদি বাংলা মাধ্যমের এই পুস্তকটিকে সহায়ক পুস্তক হিসেবে পায় তবে পাঠ বুঝতে ও রোগ নির্ণয় করতে অনেক সহজ হবে বলে আমি মনে করি। ফলে তারা ভাল চিকিৎসক হতে পারবে।
আমার প্রিয় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য এই বই উৎসর্গকৃত হল। খুঁটিনাটি বিষয়ের সংশোধনের জন্য যাদের সাহায্য নিয়েছি তাদের প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।
মেডিসিনের পাঠ্যপুস্তক বাংলা ভাষায় (Textbook of Medicine in Bangla)
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে দীর্ঘ চার বৎসর পরিশ্রমের পর বাংলায় মেডিকেলের টেক্সট বইটি লিখা শেষ করতে পেরেছি। বাংলায় বইটি লিখার পূর্বে ইংরেজিতে রচিত অনেক মেডিসিনের বইপত্র ও জার্নাল পড়েছি কিন্তু বাংলা ভাষায় একটিও মেডিসিনের বই পাইনি। বইটি সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। এজন্য দূর্বোধ্য বাংলা শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করে সহজ বাংলা শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। যে সমস্ত ইংরেজি শব্দের বাংলা অনুবাদ কোথাও পাইনি বা অনুবাদ করতে পারিনি পাঠকের সুবিধার্থে সেগুলো অবিকল ইংরেজি ভাষায় রেখে দিয়েছি (বিশেষভাবে মেডিকেল টার্মগুলো)।
এই বইটি মূলতঃ আমার প্রিয় এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য লেখা। তথাপিও এই বইটি পড়ে সর্বস্তরের চিকিৎসকবৃন্দ উপকৃত হবেন বলে আমি আশা করি বিশেষতঃ যারা মেডিসিন practice করেন। কেউ কেউ এরূপ মন্তব্যও করেছেন যে এই বই থেকে হাতুড়ে ডাক্তারেরা লাভবান হবে। এব্যপারে আমার বক্তব্য এই যে, আমাদের দেশে quack practice আইনতঃ নিষিদ্ধ নয়। এমতাবস্থায় যদি তারা এই বইটি পড়ে উপকৃত হয় তাতে ক্ষতি কি? বরং যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান বুঝার চেষ্টা করবে তখনই তার নিজের জ্ঞানের দৈন্যতা ধরা পড়বে এবং শিক্ষিত ও ডিগ্রীধারী চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (Clinical Method)
নিজ ভাষা দিয়ে নিজেকে ও অন্যকে খুব সহজে সঠিকভাবে অনুভব করা যায় – এই চিন্তা শিক্ষক জীবনের শুরু থেকে আমার মাথায় কাজ করত। কিন্তু শিক্ষকতা জীবনের শেষের দিকে এসে আরও একটি জিনিস চোখে পড়লো আর তা হচ্ছে; সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় অদক্ষতা। পড়াতে ও পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে ইংরেজি পঠন ও লিখনে তাদের দুর্বলতা প্রতিভাত হতে লাগল। আমার ছাত্রজীবনে আমি ইংরেজীতে যথেষ্ট দক্ষ ছিলাম এবং উল্লেখযোগ্য নম্বর পেতাম। সে সময় জিপিএ-৫ স্কোরিং পদ্ধতি ছিলনা। কিন্তু এখনকার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মাঝে ইংরেজীতে তেমন দক্ষতা পরিলক্ষিত হয় না। আমার মত সব শিক্ষকেরাই এটা টের পাচ্ছেন।
এ ধরণের শিক্ষার্থীদের ইংলিশ মিডিয়ামে মেডিসিন টেক্সট বই ও রোগ নির্ণয় পদ্ধতি পড়ে তা আয়ত্বে নিয়ে আসা এবং রোগীর উপরে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ভাষাগত অহেতুক বাড়তি চাপ পড়ছে এবং অনেকক্ষেত্রে পাঠ বুঝতে না পেরে উল্টো বুঝার ঘটনাও ঘটছে। তাই শিক্ষক হিসেবে ইংরেজী মাধ্যমের মূল বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যদি বাংলা মাধ্যমের এই পুস্তকটিকে সহায়ক পুস্তক হিসেবে পায় তবে তাদের পাঠ বুঝতে ও রোগ নির্ণয় করতে অনেক সহজ হবে বলে আমি মনে করি। এরূপ একটি আশা নিয়েই বইটি লিখেছি।