সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিকার

good deeds

সৎ কাজ বলতে কি বুঝায়? অসৎ কাজই বা কি?
সহজভাবে বলতে গেলে বলতে হয় সৎকাজ মানে আল্লাহ ও তার রাসূল নির্দেশিত যেকোন কাজ এবং এর বিপরীত অর্থাৎ তাদের দ্বারা নিষিদ্ধ কাজকে বলা হয় অসৎ কাজ।

যে সমাজ স্রষ্টাদ্রোহী সেখানে এই আদেশ নিষেধের প্রয়োজন নেই। নিজের খারাপ নফসের পূজারী হয়ে পৃথিবীতে যা ইচ্ছা-স্বাধীন করতে পারা, অন্যের ক্ষতি করে নিজের আখের গুছাও (শুধুমাত্র লোকচক্ষুর ভয় ও বিপরীতমুখী মারের ভয় না থাকলে) এটাই তাদের মূলমন্ত্র।

অপরপক্ষে শুধুমাত্র স্রষ্টা বা আল্লাহকে ভয় করে তাকে হাজির নাজির জেনে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্ন ইবাদতী জিন্দেগী যাপন একজন মুমিন মুসলমানের কাজ। তিনি যে মুসলিম সমাজে বসবাস করেন সেখানে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিকার করার প্রশ্নটি জড়িত। বৈরাষ্ট্রীয়, অধার্মিকদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।

ব্যক্তিগত পর্যায়

ব্যক্তির থেকে সমাজ – সমাজ থেকে রাষ্ট্র। কাজেই ব্যক্তির প্রভাব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিভাত হয়। ব্যক্তিসত্বায় বড় সত্বা। কারণ এখান থেকে মনুষ্য সমাজের সৃষ্টি। ব্যক্তির ভাল পরিবর্তন মানে সমাজের ভাল পরিবর্তন। তদ্রুপ ব্যক্তির কোন খারাপ চরিত্রের প্রভাব সমাজেও প্রতিফলিত হয়। কোন ব্যক্তির কাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একান্ত ব্যক্তিগত হয় না কারণ ব্যক্তি যদি সমাজ থেকে দূরে বৈরাগ্য জীবন যাপন করত (যা ইসলাম সমর্থন করেনা, কেননা আমাদের পথ প্রদর্শক নবী করীম (সাঃ) তা করেননি) তবে একান্ত ব্যক্তিগত কাজ বলে কিছু থাকত। কিন্তু মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব তাই সমাজের মানুষের সাথে তার প্রতিদিনের একটি ক্রিয়াকর্ম (interaction) চলে যেখানে সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে মিলেমিশে খাপ খাইয়ে তাকে চলতে হয়। ইসলাম সমাজ জীবনের স্বাভাবিক ধারায় বিশ্বাস করে। এখানে সব মানুষ গুরুত্ব ও অধিকারের দিক থেকে সমান। যোগ্যতার দিক থেকে কম-বেশী হলেও সবাই আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি এবং এক আদমের সন্তান। কাজেই মানুষে মানুষের উপর প্রভুত্ব খাটানো তা তার যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব যতই কম থাকুকনা কেন এটা অন্যায়। ইসলাম এক্ষেত্রে সীমারেখা বেধে দিয়েছে। মানুষের অধিকারহরন ও সীমালঙ্ঘন ইসলাম সমর্থন করেনা। এক্ষেত্রে অনেক পাশ্চাত্য প্রেমিক ব্যক্তি মনে করেন পাশ্চাত্য সমাজই প্রকৃতপক্ষে মানবতাবাদী। কিন্তু শুধুমাত্র অতীত বর্তমান ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা-দীক্ষা ও জৌলুশ দেখে তারা বিভ্রান্ত হন। মুসলিম শাসকদের বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা দেখে তারা তা ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের উপর চাপায়। একটা সঠিক পথ ও পথচলা এবং পথভ্রষ্ঠতা এক হতে পারেনা। এটা তারা ভুলে যায়। পথভ্রষ্টতার কারণে যদি তারা পথের উপর দোষারোপ করে এ কেমন বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক!

ব্যক্তি পর্যায়ের আত্মিক সংশোধন যেমন সমাজকে প্রভাবিত করতে পারে। সমাজের মানুষ ঐ ব্যক্তির আখলাক বা চরিত্র দেখে নিজেরা অনুসরণ করতেও পারে। তদ্রুপ সমাজের প্রভাবও ব্যক্তির উপর পড়ে। সমাজের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ অন্যান্যরা যা করে সেটার অনুসরন করে। কাজেই সমাজের ভাল ও খারাপের প্রভাব তাদের উপর পড়ে এবং জীবনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করে।

দায়ভার কার উপর?

পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরান ১১০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন “তোমরা হচ্ছ পৃথিবীর সর্বোত্তম জাতি, তোমাদের উদ্ভব করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির কল্যানের জন্যই। তোমরা মানুষদের সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং তোমরা নিজেরাও আল্লাহর উপর ঈমান রাখবে”। হাদীস শরীফে আছে “তোমরা যদি কোন অসৎ কর্ম ঘটতে দেখ তবে হাত দিয়েই তার প্রতিবিধান করবে, সেটা সম্ভব না হলে মুখে তার প্রতিবাদ করবে এবং সেটাও সম্ভব না হলে অন্তরে ঐ কাজের প্রতি ঘৃনা পোষন করবে”। কাজেই জাতি হিসেবে মুসলিম জাতি এবং ব্যক্তি হিসাবে সকল মুসলিম ব্যক্তির উপর আল্লাহর এই বানীর দায়িত্ব পালন বর্তায়।

কিন্তু যেহেতু, জ্ঞানে-গুণে, শিক্ষা-দীক্ষায় ও যোগ্যতায় সকল মানুষ সমান নয় তাই প্রাথমিকভাবে এর দায়িত্ব নেতৃস্থানীয়দের উপর বর্তায়। তবে নেতৃত্ব জিনিসটা খুবই আপেক্ষিক। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র আছে এবং জীবনের তথা পরিবার ও সমাজের কোন না কোন ক্ষেত্রে তাকে আদেশ উপদেশ দিতে হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শুনতে হয়। কাজেই এক্ষেত্রে ছোট পরিসরে হলেও সেও একজন নেতা। এমন ব্যক্তি সমাজে খুবই বিরল যে এমনই ব্যক্তিত্বহীন যে সকল স্তরের মানুষই তাকে কাজে লাগায় ও কথা শুনায়, সে কখনও কাউকে কথা শুনাতে বা আদেশ পালন করাতে পারেনা। একমাত্র অবোধ শিশু কিংবা নির্বোধ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছাড়া সমাজে এমন ব্যক্তি দেখা যায় না।

কাজেই সৎ কাজের আদেশ বা অসৎ কাজের প্রতিকার মুসলিম সমাজে একজন মুসলিম তার নিজস্ব পর্যায় থেকে এককভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে (সাংগঠনিক) করতে পারে। সেটা ক্ষেত্র বিশেষে অরাজনৈতিক এবং কখনও কথনও রাজনৈতিকও হতে পারে।

সৎ কাজের আদেশে নিয়োজিত ব্যক্তিদের গুণাবলী

উপরোক্ত কাজের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও ইসলামী আখলাক/চরিত্র থাকতে হবে। সবচাইতে বেশি যেটা থাকতে হবে সেটা একটা জাগ্রত বিবেকবোধ। সত্য ও ন্যয়ের প্রতি আন্তরিক আকর্ষন এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতি আন্তরিক বিকর্ষন। অনেকে যুক্তি দেখান যে আমার তো তেমন ভাল জ্ঞানবুদ্ধি নেই, সুতরাং আমি ঐ কাজের উপযুক্ত নই। এভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়। আবার অনেক স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি এই দায়িত্ব পালন সঠিকভাবে না পালন করার কারনে হিতে বিপরীতও দেখা যায়।

শুধুমাত্র অজ্ঞতার অজুহাত দিয়ে নিজ কর্তব্য পালন করবে না এবং পার পেয়ে যাবে একথা সঠিক নয়। কারন সত্য-অসত্য সুস্পষ্ট না করে আল্লাহ’তায়ালা কোন ব্যক্তিকে সাজা দিবেন না। সূরা আনফাল এর ৪২ নং আয়াতে বলা হয়েছে “আল্লাহ যে বিষয়ে ফায়সালা করিয়াছেন তাহা তিনি প্রকাশ করবেনই, যেন যাকে ধ্বংস হতে হবে সে যেন স্পষ্ট দলিলের আলোকেই ধ্বংস হয়। আর যাকে জীবিত থাকতে হবে সেও যেন সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতেই জীবিত থাকে”

সূরা নিসা ১৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী রসূলগণকে প্রেরন করেছি, যাতে রাসূল (সাঃ) গণের পরে আল্লাহর বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করার মত অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে”। জনৈক ঈমামকে প্রশ্ন করা হল “একদল মানুষ অজ্ঞ, কিয়ামতের দিন তাদের কিভাবে বিচার করা হবে”? জবাবে তিনি বললেন “সেদিন একজন আলেমকে হাজির করা হবে যে সবকিছু জেনে-শুনেও তা পালন করতোনা। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি এসব জেনে-শুনেও মেনে চলতে না কেন? এরপর তার আর কোন অজুহাত থাকবে না। তখন কৃতকর্মের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে। আরেকজনকে হাজির করে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে – তুমি কেন পালন করতে না? জবাবে সে বলবে, আমি জানতাম না তাই পালন করিনি। প্রতুত্তরে বলা হবে, জানতাম না!! তো শিখতে তো কোন বাধা ছিলনা, শিখে নাওনি কেন?”

কাজেই এই কাজের ব্যক্তিদের জ্ঞানী হতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত বিবেককে কাজে লাগিয়ে চলতি ঘটনাবলীর বিচার বিশ্লেষন করতে হবে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে হবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সঠিক চিন্তাভাবনা ও আল্লাহর উপর ভক্তি ও ভরসা সহকারে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিকার জিনিসটা কিছুইনা, আসলে এটা সমাজ সংস্কারের কাজ বা সমাজ সংস্কারের কাজ অব্যাহত রাখা। এবং এই কাজ করতে হলে শুধু কুরআন-হাদীস, ইসলামী সাহিত্যে ও ফেকা জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, ইতিহাস, সমাজ, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কেও পরিপক্ক জ্ঞানের প্রয়োজন।

কর্মপদ্ধতি

‘সৎ কাজের আদেশ’ বা ‘আমর বিল মারুফ’ – এর কর্মপদ্ধতি হল এই যে মানুষকে শুধু উচ্চারণে কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়। প্রকৃত কথা হচ্ছে; মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা এবং কথার সাথে সাথে কাজের মিল থাকা।

নিজে সৎ কাজের আদেশ দিচ্ছি (যেমন ধরুন অন্যকে জামায়াতে নামাজ পড়ার তাগিদ দিচ্ছি) কিন্তু নিজেই সেটা করছি না। আবার ধরুন দান-খয়রাতের প্রচুর উপদেশ দিচ্ছি কিন্তু নিজে কিছুই দান-খয়রাত করছি না সামর্থ্য থাকা সত্বেও। এই ধরণের সৎ কাজের আদেশ কখনও সফল হতে পারেনা। কারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে থাকেনা। সবাই সবই দেখে। কথা শুনে মান্য করার চেয়ে কাজ করতে দেখে মানুষ তাকে মান্য করে বেশী।

আমর বিল মারুফের দুটি পন্থা রয়েছে, একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ এবং অপরটি হচ্ছে পরোক্ষ

প্রত্যক্ষ পন্থায় কিছুটা চাপ প্রয়োগ প্রচ্ছন্নভাবে হলেও থাকে এবং অনেকে সেটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেও মেনে নিতে পারে সাময়িকভাবে। এটা উপদেশ শ্রবণকারী ব্যক্তির মনোস্তাত্বিক কোন পরিবর্তন ছাড়ায় ঘটে এবং অনেকক্ষেত্রে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়না (যেমন – একজন নামাজী পিতা তার প্রাপ্তবয়স্ক বে-নামাজী সন্তানকে প্রত্যক্ষ আদেশ করল নামাজ পড়ার জন্য এবং সে মেনে নিল। তা কখনও কখনও ক্ষণস্থায়ী হতে পারে।

অপ্রত্যক্ষ পন্থায় ‘আমর বিল মারুফ’ করলে সে আচড় অনেক বেশী ধারালো হয়। হযরত আলী (রাঃ) বলেন “মুখের কথায় না বরং তোমরা আমল দ্বারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান কর”

এই পন্থায় ‘আমর বিল মারুফ’ কারীকে সৎ, সত্যাদর্শী, মুমীন ও মুত্তাকী হতে হবে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় আম্বিয়া ও আল্লাহর ওলী-আউলিয়াগণের যত বেশী প্রত্যক্ষ অনুসারী ছিলো পৃথিবীর কোন পন্ডিত বা দার্শনিকের তা নেই। কারণ পন্ডিত দার্শনিকরা কেবল যুক্তি তর্কের মতবাদ প্রচার করেন। স্বীয় মত তুলে ধরে ঘরের কোনে বসে বই রচনা করাই তাদের কাজ। তাদের আদর্শ নিথর, নিরস। কিন্তু নবী-রাসূল ও আউলিয়াগণ কেবল আদর্শ নিয়েই আসেন না, সে অনুযায়ী যথাযথ আমলও করেন। যা বলেন সবার পূর্বে তা নিজে পালন করেন। আগে বলে পরে পালন করার নীতিও তাদের চরিত্রে ছিল না। এই পদ্ধতিতে আদেশ গ্রহণকারীর মনোজাগতিক এমন স্থায়ী পরিবর্তন সূচিত হয় যে তার চরিত্র আহ্বানকারী চরিত্রের অনূরূপ হয়ে যায়।

অনেকে মনে করেন কোন প্রকারে একবার রাষ্ট্রের তথা সমাজের চাবিকাঠি হাতে পেয়ে গেলে এমনিতেই সমাজ সংশোধন ও সংস্কার হয়ে যাবে এবং তখন একশত ভাগ ‘আমর বিল মারুফের’ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এটা কিন্তু সঠিক পন্থা নয়।

দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে; পরোক্ষ উৎসাহ ও উপদেশ

এসব কিছুই Human Psychology এর ব্যাপার। ইসলাম মানুষ নিয়ে, মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করে। কাজেই আহ্বানকারী যদি প্রত্যক্ষ আদেশ না দিয়ে পরোক্ষ পন্থায় উপদেশ ও উৎসাহ দেন তবে শ্রবণকারী বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে (যেমন ধরুন – একজনকে দেখলেন যে, সে নামাজের নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে পালন করছেন না কিন্তু তিনি অনেক বয়ঃজৈষ্ঠ তখন আপনি তাকে সংশোধনের জন্য প্রত্যক্ষ আদেশ করলে তিনি শুধু মনঃক্ষুন্ন হবেন তা নয়, বিরক্তিভরে আপনার সদোপদেশ পালন থেকে বিরত থাকতে পারেন)। কিন্তু আপনি যদি বলেন “চাচা আমি অমুক বইতে নামাজের বিধি-বিধান পড়লাম দেখেন দেখি আমার সঠিক হচ্ছে কি না, একটু মিলিয়ে দেখেন তো”। তখন তিনি উৎসাহের সাথে তা মিলিয়ে দেখবেন এবং নিজের কোথায় ভুল ছিল তা বুঝতে পারবেন এবং নিজেকে শুধরিয়ে নিবেন। মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের একটু চালাক ও বুদ্ধিসম্পন্ন মনঃবিশ্লেষক হওয়া দরকার।

মানুষকে সংশোধন করার পদ্ধতি

আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে এটা তিন প্রকার –

  1. ভীতি প্রদর্শনঃ নানারকম ভয়-ভীতি দেখালে মানুষ অনেক সময় কথা শুনে বা মান্য করে। অধীনস্তকে ভয় দেখালেন যে এই কাজটি না করলে তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
  2. প্রলোভন দেখানোঃ Incentive, Enticement ইত্যাদি কথাগুলো প্রচলিত আছে। এগুলো হচ্ছে কোন লোভ বা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে কাজে প্ররোচিত করা বা সংশোধন করা বা উৎসাহ দান। যেমন – চাকুরী দেওয়া এক ধরনের প্রলোভন এবং এর সাথে তার ভাতা প্রলোভনের আরেক ধাপ। প্রলোভনের মাধ্যমে অনেক কাজই আদায় করা সম্ভব। বাচ্চাকে যদি বলেন স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করলে তোমাকে আধুনিক মডেলের একটা ঘড়ি কিনে দেওয়া হবে, তাহলে দেখবেন বাচ্চা এই প্রলোভনে ভাল করে অতি উৎসাহের সাথে পড়াশুনা শুরু করল। সেরুপ নামায পড়লে তোমায় মিষ্টি দেওয়া হবে ইত্যাদি।
  3. কনডিশনিং করা (Conditioning)ঃ এটা আর কিছু নয় একজন মানুষ বা ব্যাক্তির মনোজাগতিক পরিবর্তনের জন্য তার মনমস্তিষ্কের পরিশুদ্ধকরন। এটা শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি তবে কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এটা জীববিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান স্বীকৃত একটি কার্যপদ্ধতি। আমাদের শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ড দুভাবে ঘটে থাকে। একটা সচেতনভাবে বিবেক বা বুদ্ধিমত্তাকে সদা জাগ্রত রেখে আরেকটি হয় মনের অবচেতনভাবে। যার জন্য প্রত্যক্ষ ইচ্ছাশক্তি ছাড়ায় কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। এটাকে Reflex প্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়া আবার দুইপ্রকার – প্রথমটি হচ্ছে শর্তহীন কর্মের বহিঃপ্রকাশ (Unconditioned Reflex) এবং দ্বিতীয়টি শর্তযুক্ত কর্মের বহিঃপ্রকাশ (Conditioned Reflex)। প্রথমটি তৈরী করা বা বাতিল করনা যায়না, যেমন – আপনার চোখে কেহ আঙ্গুল দিতে উদ্যত হলে সাথে সাথে আপনা-আপনিই চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। এটা শর্তযুক্ত নয়। কিন্তু পরেরটি শর্তযুক্ত। আমরা সবাই Pavlov এর পরীক্ষার কথা জানি। এই বিজ্ঞানী একটা নির্র্দিষ্ট সময়ে ঘন্টা বাজিয়ে একটা কুকুরকে খাবার দিতেন। কয়েকদিন এভাবে চলার পর ঘন্টা বাজানোর পর কুকুরটিকে খাবার না দিয়ে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলেন। দেখলেন যে, ঘন্টা বাজানোর ঐ নির্দিষ্ট সময়ে কুকুরের মুখ দিয়ে অজস্র লালা চুয়ে চুয়ে পড়ছে। আবার কয়েকদিন এভাবে ঐ নিদৃষ্ট সময়ে খাবার না দেওয়ায় কুকুরটির লালা নিঃসরন বন্ধ হয়ে গেল। এটাকেই বলা হয় শর্তসাপেক্ষে কর্মের বহিঃপ্রকাশ (Conditioned Reflex)। যা কুকুরের মনের অজান্তেই সংঘঠিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Conditioning। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট কর্ম করতে করতে তা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হওয়া।

আপনার আরদ্ধ কাজ করার জন্য আপনার মনোনীত ব্যক্তিকে পুনঃ পুনঃ ঐ কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া, কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতার সৃষ্টি করা এবং তার আত্ম-মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে নিজ ইচ্ছায় কর্ম করার পথে প্ররোচিত করা। একবার, দুবার বা পাঁচবার বলতে বলতে ঐ ব্যক্তি শুনতে শুনতে স্ব-ইচ্ছায় সেই কাজ করা শুরু করে দিবে।

কুরআন শরীফে এই তিন পদ্ধতি আল্লাহ’তায়ালা মানুষের উপর প্রয়োগ করেছেন। পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি জগতের চিন্তা করে স্রষ্টাকে চেনার আহ্বান জানিয়েছেন। পরকালের ভয় দেখিয়েছেন এবং বেহেশতের প্রলোভন দেখিয়েছেন।

সৎ কাজের আদেশ দানের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বে বর্ণিত তৃতীয় পদ্ধতিটির যথাযথ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তবে একজন মানুষ অসৎকর্ম ছেড়ে সৎকাজে প্রবৃত্ত হতে পারে।

নিজের অবস্থান থেকে আহ্বান জানানো

আপনি যদি দেশের প্রধান হন তবে সৎ কাজের আহ্বান হবে আপনার নির্বাহী আদেশ। আপনি যদি কোন রাজনৈতিক শক্তির প্রধান হন তবে সামাজিক নেতৃত্বকে সৎ কাজের আহ্বানে কাজে লাগাতে পারেন।

আপনি যদি অফিসের কর্মচারী হন এবং দেখতে পান যে, অফিসে ঘুষ আদান প্রদান চলছে এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজেও দেদারসে ঘুষ নেন এবং অপরকে ঘুষ না নেওয়ার উপদেশ দেন তা কখনও সফল হবেনা। আপনি নিজে কলুষমুক্ত হয়ে অন্যকে উপদেশ দিলে তখনি কেবল তা কার্যকরী হবে। এমনকি উপদেশ না দিলেও আপনাকে দেখে অনেকে নিজের ভূল বুঝে অন্যায় কাজ ছেড়ে দিবে।

আপনি যদি একজন ডাক্তার হন তবে কোন ডাক্তার কোন রুগীর সঙ্গে প্রতারণা করছে কিনা বুঝতে পারবেন। একজন বিচারক রায় দিতে ভূল-ত্রুটি বা অন্যায় করেছেন কিনা অন্য একজন বিচারকই সেটা বলতে পারবেন। অন্য পেশার লোকজন সেটা সঠিকভাবে বলতে পারবে না। Technical ছলচাতুরী ও চুরি ধরা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি আদর্শবান ডাক্তার হলে অন্যেরাও আপনাকে দেখে শিখবে। তদ্রুপ অন্যান্য পেশাজীবিদের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য। একজন ইঞ্জিনিয়ার জানে যে রাস্তাটি বানাতে গিয়ে কি Technical চুরি হচ্ছে। সে যদি সততার সাথে কাজটি না করে তবে অন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া সাধারণ মানুষ ঐ চুরি ধরতে পারবে না। এক্ষেত্রে ধার্মিক-অধার্মিক সকল ইঞ্জিনিয়ার যদি একাট্টা হয়ে ঐ দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নেয় তবে ঐ বিভাগে ‘আমলে সালেহ’ বা ‘সৎকাজ’ বলে কিছু থাকল না। সমাজ সংস্কার করতে হলে ঐ গ্রুপের মধ্যে থেকেই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই সৎকাজের আদেশ তার সঠিক রূপলাভ করবে।

প্রেরণা যোগানো

এটি হচ্ছে সৎকাজের আদেশের আরেকটি পর্যায়। একথা পরিষ্কার যে, প্রত্যেক সংস্কারককে প্রথমে নিজেকে সংশোধন করে নিতে হবে। তবেই সে হতে পারবে এই পথের অগ্রপথিক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে কাউকে কোন উপদেশ দিতেন না যতক্ষন না তিনি নিজে তা পালন করতেন। একজন বালকের মিষ্টি খাওয়ার গল্প আমরা সবাই জানি। বালকটি বেশী মিষ্টি খাওয়ায় তার পিতা রাসূলের কাছে বাচ্চাকে মিষ্টি না খাওয়ার বা কম খাওয়ার উপদেশ চাইতে গেলেন। নবী করীম (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে কয়েকদিন পরে আসতে বললেন। কয়েকদিন পর লোকটি তার ছেলেকে নিয়ে পূনরায় নবীজির দরবারে হাজির হলে নবীজি বালকটিকে মিষ্টি কম খাওয়ার নসীহত করলেন। উক্ত ব্যক্তিটি নবীজিকে এ ব্যপারে প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি এই উপদেশ প্রথমদিনে দিলেইতো পারতেন”! নবীজি উত্তর দিলেন যে আমিও বেশী মিষ্টি খাই। তাই এই কয়দিনে মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে তারপর বালকটিকে উপদেশ দিলাম। ইসলামে সৎকাজের আদেশদানের নিয়মটি এরকমই। নিজে পালন করে তারপর অপরকে উপদেশ দাও।

নবীজি (সাঃ) নামায-রোজার কথা বলতেন সাথে সাথে তিনিই সবচেয়ে বেশী আল্লাহর ইবাদত করতেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি নিজের নিকট আত্মীয়দের সামনে পাঠাতেন যাতে অন্যরা একথা মনে না করে যে নিজেরগুলো নিরাপদ রেখে অন্যদের তিনি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। সমাজে অনেক তথাকথিত ধার্মিক, আলেম পাওয়া যায় যারা নিজ সন্তানকে ধর্ম বা ধর্মীয় আন্দোলন থেকে দূরে রেখে নিরাপদ চাকুরী-বাকুরী, লেখাপড়া, সংসার ও জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে ব্যপৃত রাখেন কিন্তু অন্যের ছেলে মেয়েকে এই রাস্তায় জীবনপাত করার উপদেশ দেন। এটা অত্যান্ত অমানবিক, অধার্মিক ও গর্হিত কাজ।

কথা কম বলে কাজে দেখানো

নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়াগণ ঘন্টার পর ঘন্টা ভাষনপটু ছিলেন না। তারা মিতভাষী ছিলেন, কথা কম বলতেন, কাজের মাধ্যমে কথার বাস্তবতা দেখিয়ে দিতেন ও বুঝিয়ে দিতেন। যারা কাজ করে তারা কম কথা বলে আর যারা কাজ করে না বেশী কথা বলাই তাদের স্বভাব।

অসৎ কাজের প্রতিকার/প্রতিরোধ

‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ খারাপ কাজের বা অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।

প্রথম পর্যায় (এড়িয়ে চলা) -

অন্যায়কারীকে এড়িয়ে চলতে হবে। তার প্রতি ঔদাসিন্য বা তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ করতে হবে। যেমন, কোন ব্যক্তি আপনার প্রতিবেশী, আপনি জানতে পারছেন সে ঘুষ খেয়ে টাকা-পয়সা করছে। আপনি তার প্রতিবেশী এবং আলাপ পরিচয় যতই থাকুক আপনাকে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে বেশী টাকা-পয়সার কারনে তাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া সমীচিন হবে না। নচেৎ সে পাপকাজে বেশী উৎসাহবোধ করবে। এইরূপ ব্যক্তিকে সমাজের অন্যান্য লোকজন সম্মান দেখালেও, সাদরে আদর আপ্যায়ন করলেও একজন খারাপ কাজের প্রতিবিধানকারী হিসাবে আপনার নিজস্ব অবস্থান ঠিক রাখতে হবে। অন্যজনকে দেখে বিভ্রান্ত হলে চলবে না। এইভাবে সমাজের অন্যান্য লোক কখনও কখনও আপনার সমালোচনা করলেও আপনার প্রতি অনেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে একং আকৃষ্ট হয়ে আপনার পথ অবলম্বন করবে। যদি অন্যান্যদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নাও পান তবুও এই পথের পথিককে হতাশ ও বিভ্রান্ত হওয়া চলবে না।

ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই উদাহরন যেমন প্রযোজ্য পরিবারের ও সমাজের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা নীতি ক্ষেত্রে বিশেষে প্রযোজ্য হতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায় -

অন্যায় কাজের প্রতিরোধের বা প্রতিকারের ২য় পর্যায়ে যে কাজটির কথা আলেমগণ বলে থাকেন তাহলো জিহ্বার সাহায্যে মানুষকে বাধা প্রদান বা নিষেধ করা। পরামর্শ ও উপদেশ সহকারে অন্যায়কারীর ভ্রান্তি ধরিয়ে দিয়ে তাকে সৎ পথে আহ্বান করতে হবে। বিভ্রান্তির দিকে যারা অগ্রসর হয় তাদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা নিতান্ত অজ্ঞতাবশত বা কোন কু-প্ররোচনায় পড়ে এই পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো তাকে কেই বলে দেয়নি, তার পথ প্রদর্শনের কেউ কেউ ছিলনা। তার একজন গাইডের অভাব ছিল। তাই এমন লোকদের উষ্ণ পরিবেশে শান্ত মেজাজে আলোচনা পরামর্শের মাধ্যমে ভ্রান্তিত্যাগ ও সত্য গ্রহণে উৎসাহিত করা যায়। অর্থাৎ আমাদের সাথে যাদের সংলাপ সংসর্গ রয়েছে তাদের যদি ভ্রান্তির মধ্যে দেখি তবে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

৩য় পর্যায় -

এই পর্যায়ে আসে অন্যায়কারীর অন্যায় কাজ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়ার পালা। বিভ্রান্তির মায়াজাল কখনও কখনও মানুষকে এমনভাবে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে যখন আমাদের এড়িয়ে চলার নীতিও তেমন তার সত্যপোলব্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে সামর্থ্য হয়না, তেমনি যুক্তিসিদ্ধ আলোচনা পরামর্শও তার জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। এরূপক্ষেত্রে বিভ্রান্তির করাল গ্রাস থেকে তাকে পরিত্রাণ দিতে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। কার্যকরী ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কার্যকরী ব্যবস্থা বলতে শুধুমাত্র বল প্রয়োগকে বুঝায় না, অবশ্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন কখনও কখনও অপরিহার্য্য হয়ে ওঠে।

ইসলামে বেত্রাঘাত বা মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি মুক্তির জন্য কঠোর পন্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন হয়, তবে সবক্ষেত্রে নয়।

হযরত আলী (রাঃ) নাহজুল বালাগা ১০৭ নং খুতবায় নবীকরীম (সাঃ) কে ডাক্তারের সাথে তুলনা করে বলেন, “ডাক্তারের পক্ষে রোগের চিকিৎসা কারাটা একটা সাধারণ ব্যপার। কিন্তু কখনও কখনও তা হয় অত্যান্ত বেদনাদায়ক। তখন তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করেও অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও তেমনি উভয় প্রকার আমল করতেন। তিনি (সাঃ) দয়া কোমলতার আশ্রয় নিতেন। অর্থাৎ পথভ্রষ্টকে পথের দিশা দিতে তিনি প্রথমে মোলায়েম ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয়ে দাঁড়াতো যে কোমলতা সেখানে অবান্তর ও মূল্যহীন হয়ে পড়তো তখন কিন্তু তিনি অব্যাহতি দিতেন না। চরম কাঠিন্যের সাথে তিনি তাদের চিকিৎসা করতেন। কোমলতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়, কঠোরতায় তেমনি ছিলেন আপোষহীন, প্রচন্ড”

কাজেই দেখা যাচ্ছে ইসলামী সমাজ সংস্কার বা পরিশুদ্ধ করতে ও রাখতে আপনাকে আমর বিল মারুফ (সৎকাজের আদেশ) ও নাহি আনেল মুনকারের (অসৎ কাজের প্রতিবিধান) এই নীতিসমূহ নিজ নিজ পরিসরে ও পরিমন্ডলে একজন মুসলমান হিসেবে পালনকরা অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য।

সমাজ যদি পঙ্কিলতার অতল গহ্বরের দিকে ধাবিত হতে থাকে তবে নিজ মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি প্রয়োগ করে সত্যের পথে মানুষকে আহ্বান করতে হবে এককভাবে আবার কখনও কখনও সংঘবদ্ধভাবে, সাংগঠনিত শক্তির মাধ্যমে। পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের পাপাচার, ন্যায়নীতির পরিপন্থী, সীমালঙ্ঘন কর্মকান্ড দূরীভূত করার জন্য নিজ শক্তি সামর্থের উপর ভিত্তি করে প্রতিকারে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইবাদত, নামায-রোজা, হজ্জ-যাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এই কর্তব্য পালন হবে না। ব্যক্তিগত ইবাদতের ও আখলাকের পরিশুদ্ধি অবশ্যই প্রথম প্রয়োজন। সেটা ছাড়া কোন কাজই ফলপ্রসূ হবে না। কিন্তু এই কাজের পাশাপাশি সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের প্রতিকারের কাজটি চালিয়ে যাওয়া একজন ঈমানদার মুসলমানের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

[প্রবন্ধটির কিছু কিছু অংশ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক হযরত আয়াতুল্লাহ মোর্তুজা মোতাহারীর “ঈমাম হোসেনের কালজয়ী আদর্শ” নামক পুস্তক থেকে নেওয়া হয়েছে]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top